তবে বাঙালি বাচ্ছারা ডাক নামেই সকলের কাছে পরিচিত হয়। অন্তত তার কাছের জনের কাছে। যে ডাকের সাথে তার চেহারা,আদব কায়দা ফুটে ওঠে।ডাক নাম যে সব সময় একটাই হয় তা নয়,একের অধিকও হতে পারে। সাধারণত বাঙালি ছেলেদের তার বাবা মায়েরা ডাকে বাবু অথবা খোকা বলে। আর মেয়ে হলে খুকি বা বুড়ি। এছাড়াও ছেলেদের ডাকা হয় বাবলু,বাবাই,টুটুন, টোটন,রনি,পিকু,গোগল,বুম্বা,পাপাই, তাতাই,ছটকু, জয়, জিৎ, তাতা, পিন্টু,মন্টু,রাজা। আর মেয়েদের মাম্পি,সোনা,মনা,মাম,মিমি, তিতির,টুকটুক, তুলতুল,বুলবুল, টুসটুসী,ঝুম্পা,টুম্পা, রিনা, রিঙ্কু,ইত্যাদি নামে।
ডাক নাম গুলো সাধারণত চারিত্রিক বৈশিষ্ট সমন্বিত হয়। কিন্তু এই নামের সাথে গভীর ভালবাসা,স্নেহ,আবেগ, অনুভূতি, জড়িয়ে থাকে। আর সেজন্যই ভালবাসার মানুষেরা কেউ ভাল নাম ধরে ডাকতে চাইনা। এটা আরো গুরুত্বপূর্ন হয়ে ওঠে এজন্য যে যত আত্মীয় স্বজন,পরিবারের শুভাকাঙ্খী আছেন,তাদের প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ডাক নাম দেন। যেমন ছেলেদের ক্ষেত্রে হয়ত মা ডাকেন বাবু অথবা বাবুসোনা। বাবা ডাকেন বাবাই, দাদু দিদা ডাকেন দাদুভাই আবার বন্ধুরা হয়ত ডাকে পাপাই,পাপু আবার গলু, গোবলু বা মটু বলে ডাকে হয়ত তার খুড়তুতো,পিসতুতো বা মামাতো ভাই বোন। কখনো ক্রিকেট পাগল বন্ধু হয়ত ডাকে তেন্ডুলকর। কেউ আবার জিকো, পেলে,গারিঞ্চা বা কাকাও হয়ে ওঠে কারো কারো কাছে।
কখনো কখনো এই ডাক নাম আবার ভালো নামকেও ছাপিয়ে যায়। সারা জীবন কেউ কেউ ডাক নামেই পরিচিত ও বিখ্যাত হন। যেমন গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী, অলকেশ লাহিড়ী লোকের কাছে যথাক্রমে মিঠুন ডা ও বাপিদা নামেই পরিচিত। আবার দেখুন আভাস কুমার গাঙ্গুলি, প্রবোধ চন্দ্র দে,নীলাঞ্জনা লাহিড়ী, এঁরা বিশ্বের মানুষের কাছে যথাক্রমে কিশোর কুমার, মান্না দে, ঝুম্পা লাহিড়ী নামেই পরিচিত। এছাড়াও বহু বাঙালি আছেন যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডাক নামেই আমজনতার কাছে সুপরিচিত। যেমন ধরুন ফুটবলার গোষ্ঠ পাল,চুনী গোস্বামী এদের ভাল নাম আসলে গোষ্ঠ বিহারী পাল এবং সুবিমল গোস্বামী। পঞ্চমদা আসলে রাহুলদেব বর্মন, রিনাদী অপর্ণা সেন, যাঁর কথা না বললেই নয়- আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় সত্যজিৎ রায় মানিকদা , এমনকি তাঁর ছেলে সন্দীপ রায় বাবুদা নামেই অধিক পরিচিত।
(ক্রমশ)
0 Comments