মানস রায়ঃ পৃথিবীতে যুগে যুগে কিছু মানুষ আসেন যাদের নেতৃত্ব, দর্শন পাল্টে দেয় গোটা দুনিয়াকে। যারা অন্ধকারে হাজির হন আলোর মশাল হাতে। যারা নিজের জীবনের সবটুকু দিয়ে রচনা করে যান মানবকল্যাণের বাণী। ঠিক এমনই একজন মানুষ হলেন মহাত্মা গান্ধী(Mahatma Gandhi)। শান্তির স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে, তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করে গেছেন অন্যরকম এক দৃষ্টান্ত।
১৮৬৯ সালের ২রা অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে এক হিন্দু পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর আসল নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। যদিও মহাত্মা গান্ধী নামেই তিনি বেশি পরিচিত। তাঁর বাবা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান আর মা পুতলিবা ছিলেন প্রণামী বৈষ্ণব গোষ্ঠীর মেয়ে। জন্মের পর ছোটবেলায় গান্ধী বড় হয়েছেন তাঁর জন্মস্থান পোরবন্দরেই। আর সেখানেই শুরু হয় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা। মায়ের আদর্শ আর গুজরাটের জৈন প্রভাবিত পরিবেশ থেকে তিনি তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম শিক্ষা লাভ করেন।
ছাত্র হিসেবে মহাত্মা গান্ধী খুব একটা মেধাবী ছিলেন না। ছাত্রজীবনের অনেকটা সময় তিনি পার করেন পোরবন্দর আর রাজকোটে। রাজকোটের স্থানীয় এক স্কুল থেকে ইতিহাস, ভূগোল ও গণিতের প্রাথমিক শিক্ষা পান তিনি। তারপর কোনো রকমে গুজরাটের ভবনগরের সামালদাস কলেজ থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপরেই বিলাতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ার প্রবল ইচ্ছা হয় গান্ধীর।কিন্তু তাঁর পরিবারের সকলে নিরামিষভোজী এবং রক্ষণশীল মনোভাবের হওয়ায় ছেলে বিলাতে গিয়ে বংশের নিয়মকানুন সম্পূর্ণভাবে ভুলে যেতে পারে সেই চিন্তা করে শুরুতে কেউ তাঁকে বিলাতে যাওয়ার অনুমতি দিতে রাজি হননি। পরবর্তীতে তাঁর বড় ভাই তাঁকে ব্যারিস্টারি পড়ার অনুমতি দিলে, ১৮৮৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ১৮ বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে চলে যান মহাত্মা গান্ধী।
তারপর মহাত্মা গান্ধী লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর আইনজীবী হিসেবে কাজ পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল গান্ধীর। তারপর ১৮৯৩ সালে দাদা আব্দুল্লাহ এর আমন্ত্রণে আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে দক্ষিণ আফ্রিকা যান । সেখানে যাওয়ার পর তিনি ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সাধারণভাবে প্রচলিত বৈষম্যের শিকার হন।
এবং তারপর তিনি সেদেশের ভারতীয়দের অধিকার সচেতন করে তোলার জন্য ১৮৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস। এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি সেখানকার ভারতীয়দের রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ করেন।
তারপর দীর্ঘদিন আফ্রিকায় বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়ে ১৯১৫ সালের ৯ই জানুয়ারী তিনি ভারতে ফিরে আসেন।
সত্যাগ্রহ ছিল মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর প্রতিষ্ঠিত একটি দর্শন।১৯০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন খবরের কাগজে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়।. মুল উপাদান হলো ' সত্য ' ও ' অহিংস '।
ভারতে ফিরে তিনি প্রথম এই সত্যাগ্রহ প্রয়োগ করেন চম্পারনে। ভারতীয় কৃষকদের জীবনযাত্রা কেমন আর তাঁরা কী ভাবে চাষাবাদ করেন, চম্পারণেই তা প্রথম চাক্ষুস করেছিলেন গান্ধীজি।তখন তিনকাঠিয়া বলে একটি নিয়ম চালু ছিল, যা শতাধিক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছিল। জমির মালিককে তাঁর জমির একতৃতীয়াংশ নীল চাষের জন্য ছেড়ে দিতে হত। এ চাষ লাভজনক না হলেও তারা করতে বাধ্য থাকত। তার উপর ছিল চড়া রাজস্বের হার। এ ভাবে চলত কৃষকদের শোষণ। পরিস্থিতি প্রচণ্ড অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে গান্ধীজী স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের জড়ো করে গ্রামবাসীদের জন্য আশ্রম তৈরি করেন আর এর কিছুদিন পরেই প্রতিষ্ঠা করেন হাসপাতাল ও স্কুল। পরবর্তীতে তিনি জমিদারদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত বিক্ষোভ এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। তখন তারা রাজস্বের হার বৃদ্ধি বর্জন এবং দুর্ভিক্ষ শেষ হবার আগ পর্যন্ত তা সংগ্রহ করা স্থগিত করে। এই বিক্ষোভ চলাকালীন সময়েই জনগণ খুশী হয়ে গান্ধীকে বাপু (পিতা) এবং মহাত্মা (মহৎ হৃদয়) উপাধি দান করে।
এর পর খেদা ও আমেদাবাদে সফল ভাবে সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালন করে পান জাতীয় কংগ্রেসের দায়িত্ব। দায়িত্ব পাওয়ার পর সফল ভাবে পরিচালনা করেন অসহযোগ, আইন অমান্য এবং ভারত ছাড়োর মত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সর্বভারতীয় আন্দোলন।
অবশেষে ভারত স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পরে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় প্রার্থনা সভা করতেন মহাত্মা গান্ধী। সেখানে সব ধর্মের কথা বলা হতো, যাতে অংশ নিতেন কয়েকশ’ মানুষ। প্রতিদিনের মতো ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি, সেদিনও সন্ধ্যার প্রার্থনা সভার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন গান্ধী। ঠিক সেই মূহুর্তেই নাথুরাম গডসে খুব কাছ থেকে পিস্তলের তিনটি গুলি ছোড়েন তাঁর বুক লক্ষ্য করে, গডসের করা সেদিনের গুলিতেই মৃত্যু হয় মহাত্মা গান্ধীর। তাঁর মৃত্যুর এতবছর পেরিয়ে গেলেও পুরো বিশ্ববাসী এখনো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মহান এই নেতাকে।
এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনই মহাত্মা গান্ধীকে বিশ্ব ইতিহাসের অন্যন্যসাধারণ ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। প্রায় শতাব্দীকাল পূর্বের এই অহিংস সংগ্রাম আজ পর্যন্ত অমলিন রূপ নিয়ে বিরাজ করছে। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান সম্প্রতি প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করতেন মহাত্মা গান্ধীকে। আর ম্যান্ডেলার জীবনের শেষ অর্ধাংশ পরিপূর্ণভাবে নিবেদিত এবং অনুসৃত হয়েছে গান্ধীর উদ্ভাবিত সত্যাগ্রহের নীতিতে।
একটি বিষয় বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য, মহাত্মাজীর অহিংস আন্দোলন এবং সত্যাগ্রহ এমন সময় উপমহাদেশে উচ্চারিত হয়েছে যখন কেবলমাত্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটেছে, যখন ইউরেশিয়ার বিরাট অংশে সাধিত হয়েছে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, যখন উপমহাদেশের অকস্মাত্ ধর্ম-প্রভাবিত রাজনীতির অঙ্কুরোদ্গম শুরু হয়েছে। এটা সেই সময় যখন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প উপমহাদেশে ধীরগতিতে পুঞ্জিভূত হচ্ছে, যখন ব্রিটিশ-বিরোধী মনস্তত্ত্ব ইংরেজবিরোধী মানসিকতার ভেতরে আবর্তিত হচ্ছে, এবং বিশাল যুব ও তরুণ সমাজ আবেগতাড়িত হয়ে সশস্ত্রপন্থার মধ্যে মুক্তির পথ অন্বেষণ করছে, ঠিক সেই সময় মহাত্মা গান্ধীর 'অহিংস মতবাদ' উপমহাদেশে এমন এক মিশ্র পরিস্থিতি সৃষ্টি করল, যার ঢেউ সুদূর ইংল্যান্ডের রাজ দরবার পর্যন্ত আছড়ে পড়ল। রাজনৈতিক মহলে এই সত্যাগ্রহ নানাবিধ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভারতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে যে বহুমুখী ধারার উদ্ভব ঘটে এবং মহাত্মাকে যে কতপ্রকার বিদ্রূপবাণে বিদ্ধ হতে হয়, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সে সময় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের বিতাড়নের যে চিন্তা ক্রমশ সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের মধ্যে নিমগ্ন হয়, তখন মহাত্মা গান্ধীর অহিংস মন্ত্রকে চিহ্নিত করা হয় আপসকামী সাম্রাজ্যবাদ তোষণকারী পশ্চাত্পদ ধারণা হিসেবে।
আর একটা লক্ষণীয় বিষয় হলো—ভারতবর্ষে সে সময় নানাবিধ রাজনৈতিক দর্শনের চারণক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হয়েছিল। একদিকে জার্মানি এবং ইতালিতে হিটলার-মুসোলিনির উত্থানপর্ব, স্পেনে ফ্রাঙ্কোর আবির্ভাব, অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রবল প্রতাপে রোমাঞ্চিত ভারতের সুবিশাল যুব শক্তি। আবার তুরস্কে ইউরোপীয় আধুনিকতাবাদ, তারই ভেতর দিয়ে প্যান-ইসলামিক দর্শনে আক্রান্ত মধ্যপ্রাচ্যের একাংশ যেমন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে আচ্ছন্ন করেছে, অন্যদিকে তেমনি এসব কিছুরই প্রভাব পড়েছে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক কর্মপ্রবাহে। সন্ত্রাসবাদী দর্শন ক্রমশ হীনবল হয়ে কংগ্রেস অথবা বাম প্রভাববলয়ে ঢুকে পড়েছে। কংগ্রেসের ভেতরে অহিংসপন্থা এবং সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বিপ্লবী সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ-হিন্দ ফৌজ গঠনের মধ্য দিয়ে, প্রয়োজনবোধে জার্মানি-ইতালির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্রিটিশ বিতাড়নের কার্যক্রম; আবার তারই পাশাপাশি দ্বিজাতি তত্ত্বের বিভাজিত দৃষ্টিভঙ্গি সমস্ত ভারতবর্ষের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থির করে তুলেছিল। এত কিছুর ভেতরেও মহাত্মা গান্ধী তাঁর রাজনৈতিক দর্শন এবং অহিংস মন্ত্রে ছিলেন অবিচল ও স্থিরকল্প। এই দর্শনের জন্য তিনি যেমন সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো একজন অসাধারণ রাজনৈতিক সংগঠককেও পরিত্যাগ করতে দ্বিধা করেননি, তেমনি ভারতবর্ষের বিপুল মুসলিম জনগোষ্ঠীর দ্বিজাতি তত্ত্বের কাছেও আত্মসমর্পণ করেননি। তিনি তার নিজস্ব পদ্ধতিতে আইন অমান্য আন্দোলন করেছিলেন, লবণ আন্দোলন করেছিলেন, বিদেশি পণ্য বর্জন আন্দোলন করেছিলেন, চরকায় প্রস্তুত দেশীয় বস্ত্র আন্দোলন করেছিলেন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন করেছিলেন—কিন্তু কখনও কোনো অবস্থাতেই হিংসাত্মক আন্দোলনকে প্রশ্রয় দেননি। এক সময় যখন তাঁর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মধ্যে হিংসার ক্ষুদ্র অণুপ্রবেশ ঘটেছে বলে তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন, তখন তিনি সাময়িকভাবে সেসময় তাঁর সেই আন্দোলনের যতি টেনে দিয়েছিলেন।
মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মধ্যে যে দৃঢ়চিত্ততা ছিল, সেটাই তাঁকে সফলতার সিংহদ্বারে পৌঁছে দিয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা অর্জন তাঁর সেই সুদীর্ঘ আন্দোলনেরই অনবদ্য ফসল। লক্ষণীয় বিষয় হলো—মহাত্মার অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলন সফলভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, যেখানে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের সূত্রপাত ঘটে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে। বর্ণবৈষম্যের অভিশাপকে অহিংসার মানবতাবাদী দর্শনের অস্ত্রে পরাভূত করতে পেরেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অমৃত সন্তান নেলসন ম্যান্ডেলা। আর সে কথা তিনি জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত বিস্মৃত হননি।
মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ অহিংসার দর্শন হিসেবেই ক্রমান্বয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পেয়েই চলেছে। এমনকি এই হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে জঙ্গিবাদের হিংস্র আস্ফাালন সত্ত্বেও। শান্তির মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে বিশ্বব্যাপী, হিংসার দর্শন ক্রমশ প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে সর্বত্র। চল্লিশের দশকে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে মানবতার বহ্ন্যুত্সব হচ্ছিল, তখনও শান্তিকামী মানুষের মধ্যে ধ্বনিত হচ্ছিল—'যখন প্রশ্ন আসে যুদ্ধ কি শান্তি, আমাদের বুঝে নিতে হয় নাতো ভ্রান্তি, আমরা জবাব দিই শান্তি শান্তি শান্তি।'
মহাত্মা গান্ধীকে হিংসার যূপকাঠে প্রাণ দিতে হয়েছে বটে, কিন্তু তাঁর আত্মাহুতিতে প্রাণ পেয়েছে তাঁর সুমহান আদর্শ—যা এখন ইতিহাসের অমোঘ অমর সঞ্চয়। ১৯২০ সালে সেই ব্রিটিশ কমিশনের নিকট প্রদত্ত স্পষ্টোক্তি আজ সময়ের বিচারে মানব সমাজ এবং মানবতাবাদী দর্শনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনে পরিণত হয়েছে। আজ মহাত্মার দর্শনে উজ্জীবিত মানব জাতি নির্ভয়ে ঘোষণা করতে পারে—মানবের তরে মাটির পৃথিবী, দানবের তরে নয়।
মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মধ্যে যে দৃঢ়চিত্ততা ছিল, সেটাই তাঁকে সফলতার সিংহদ্বারে পৌঁছে দিয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা অর্জন তাঁর সেই সুদীর্ঘ আন্দোলনেরই অনবদ্য ফসল। লক্ষণীয় বিষয় হলো—মহাত্মার অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলন সফলভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, যেখানে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের সূত্রপাত ঘটে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে। বর্ণবৈষম্যের অভিশাপকে অহিংসার মানবতাবাদী দর্শনের অস্ত্রে পরাভূত করতে পেরেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অমৃত সন্তান নেলসন ম্যান্ডেলা। আর সে কথা তিনি জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত বিস্মৃত হননি।
মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ অহিংসার দর্শন হিসেবেই ক্রমান্বয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পেয়েই চলেছে। এমনকি এই হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে জঙ্গিবাদের হিংস্র আস্ফাালন সত্ত্বেও। শান্তির মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে বিশ্বব্যাপী, হিংসার দর্শন ক্রমশ প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে সর্বত্র। চল্লিশের দশকে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে মানবতার বহ্ন্যুত্সব হচ্ছিল, তখনও শান্তিকামী মানুষের মধ্যে ধ্বনিত হচ্ছিল—'যখন প্রশ্ন আসে যুদ্ধ কি শান্তি, আমাদের বুঝে নিতে হয় নাতো ভ্রান্তি, আমরা জবাব দিই শান্তি শান্তি শান্তি।'
মহাত্মা গান্ধীকে হিংসার যূপকাঠে প্রাণ দিতে হয়েছে বটে, কিন্তু তাঁর আত্মাহুতিতে প্রাণ পেয়েছে তাঁর সুমহান আদর্শ—যা এখন ইতিহাসের অমোঘ অমর সঞ্চয়। ১৯২০ সালে সেই ব্রিটিশ কমিশনের নিকট প্রদত্ত স্পষ্টোক্তি আজ সময়ের বিচারে মানব সমাজ এবং মানবতাবাদী দর্শনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনে পরিণত হয়েছে। আজ মহাত্মার দর্শনে উজ্জীবিত মানব জাতি নির্ভয়ে ঘোষণা করতে পারে—মানবের তরে মাটির পৃথিবী, দানবের তরে নয়।
সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অন্যতম প্রেরণার উৎস ছিলেন গান্ধী। পৃথিবীর যেখানেই নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের কান্না শুনেছেন, সেখানেই ছুটে গিয়েছেন তিনি। শুধু আফ্রিকাই নয়, কলকাতা, নোয়াখালী সর্বত্রই তিনি ছিলেন শান্তিকামী মানুষের পথ-প্রদশর্ক।
Follow my youtube channel-
0 Comments