মেমারি বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির এর ১২৫ বছরের অজানা ইতিহাসের সন্ধানে

মেমারি বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির এখন আর শুধু মেমারির নয়, সমগ্র পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষার মানচিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। মেমারিবসীর কাছে এই বিদ্যালয় বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির হিসেবে পরিচিত হলেও এই বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল নাম Memari V.M.Institution পুরো কথা Memari Vidyasagar Memorial Institution
বিদ্যালয়ের নতুন রূপ

মডেল শ্রেণীকক্ষ

নামটি শুনে প্রথমেই প্রশ্ন জাগে এই বিদ্যালয়ের সাথে বিদ্যাসাগরের ঠিক কি স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে?
ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যখন বিদ্যাসাগর বর্ধমান ,হুগলির শিক্ষা পরিদর্শক নিযুক্ত হন তখন এই পরিদর্শনের সূত্রে তৎকালীন বর্ধমানের মেমারি এলাকার যে কজন ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ হন তার মধ্যে রসুলপুরের ভুবন মোহন এবং মেমারীর নন্দলাল ঘোষ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
নন্দলাল ঘোষ 

নন্দলাল ঘোষ এর বাড়িতে বিদ্যাসাগরের যাতায়ত ছিল।সেই সূত্রে ঘোষ পরিবারের সাথে বিদ্যাসাগরের সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ হয়। বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে আন্দোলনের ফলে তখন সদ্য বিধবা পুনর্বিবাহ আইন পাশ হয়েছে। নারী শিক্ষার জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। এদেশে নারীসমাজের উন্নতি সাধনের পথ ও পরিকল্পনা নিয়ে অনেক বিবরণ  এই ঘোষ বাড়িতে বসে আলোচনা হয়েছে। ঘোষ পরিবার তখন বিদ্যাসাগরের কাছে একটি প্রস্তাব দেয় যে তারাও বিদ্যাসাগরের এই মহান কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করতে চাই। মেমারি এলাকার নারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিদ্যাসাগরের কাছে উপায় বাতলানোর অনুরোধ রাখলে বিদ্যাসাগর তাঁদের বলেন সমাজের জন্য যদি কিছু করার ইচ্ছা থাকে তাহলে বিদ্যালয় প্ৰতিষ্ঠা করো। কারন জ্ঞানের আলো ছাড়া আইন দিয়ে এই সমাজের কোনো উন্নতি বিধান সম্ভব নয়।
1891 সালে বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রয়াত হলে ঘোষ পরিবারের তিন ভাই কেশবলল, কুঞ্জলাল এবং নন্দলাল ঘোষ বিদ্যাসাগরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে 1892 সালে এই বিদ্যালয় প্ৰতিষ্ঠা করেন। 
তারপর ধাপে ধাপে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক রূপান্তরিত হয় এই বিদ্যালয়। 1988 সালে অত্যধিক ছাত্র সংখ্যার চাপে বিদ্যালয়টি দুটি ইউনিটে ভাগ হয়ে যায়। পুরাতন বিল্ডিং টি যেটি হাসপাতালের কাছে সেটি হয় ইউনিট-ওয়ান এবং হাটপুকুরে কলেজের পাশে নতুন বিল্ডিং টি ইউনিট- টু নামে পরিচিত হয়। 
১৮৯২সালে প্রথম যখন বিদ্যালয় টি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এটি ছিল দু কুটুরির দক্ষিণ দুয়ারী একটি চালা ঘর।
প্রতিষ্ঠার সময় বিদ্যালয়ের কল্পিত চিত্র 

 পরে এটি পাকা হয়।এবং ধাপে ধাপে পরিবর্তন ঘটে আজকের রূপ পেয়েছে।


এই বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনকড়ি মুখোপাধ্যায়।


পরিচালন সমিতির প্রথম সম্পাদক কেশবলাল ঘোষ।

১৯৬৭ সালে এই বিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি, ১৯৯২ সালে শতবর্ষ পূর্তি এবং ২০১৭ সালে ১২৫বছর পূর্তির অনুষ্ঠানের রেকর্ড পাওয়া যায়।




এই বিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্ররা দেশ ই বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও এই বিদ্যালয়ের ছাত্ররা সাহসিকতার ছাপ রেখেছেন। তেমনই উল্লেখযোগ্য হলেন আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী হরেকৃষ্ণ কোনার, নৌ বিদ্রোহের সূচনা কারী বলাই চাঁদ দত্ত প্রমুখ।
বলাই চাঁদ দত্ত

এই বিদ্যালয় থেকেই জাতীয় শিক্ষকের সম্মান পেয়েছেন মাননীয় শ্রী দুর্গাপদ পাল মহাশয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ধারাবাহিক সাফল্য এই বিদ্যালয়ের সুনাম ও গৌরব বৃদ্ধি করেছে।
২০০৯ সালে মাধ্যমিকে রাজ্যে অষ্টম স্থান- প্রিয়জিৎ বিষয়ী
২০১১ সালে মাধ্যমিকে রাজ্যে তৃতীয় স্থান- সৌরভ বৈরাগ্য
২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে অষ্টম স্থান- সৌরভ বৈরাগ্য
২০১৭ সালে মাধ্যমিকে রাজ্যে দশম স্থান- অর্ধেন্দু মৌলি ঘোষ
২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে ষষ্ঠ স্থান- অর্ধেন্দু মৌলি ঘোষ
২০১৯ সালে মাধ্যমিকে রাজ্যে দশম স্থান -সৌমদীপ ঘোষ
২০২০ সালে মাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম স্থান- অরিত্র পাল। 
২০২১ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে নবম স্থান- সৃজিতা ঘোষ। 


                                                                      সৃজিতা ঘোষ এর মানপত্র 


অর্ধেন্দুমৌলি ঘোষ 

সৌরভ বৈরাগ্য
পড়ুন- নেতাজীর জীবন ও বাণী

আরও বহু অজানা তথ্য জানতে ভিডিওটি দেখুন। 

Post a Comment

0 Comments