আপনি কি জানেন কলকাতায় এখন যেখানে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল(Victoria Memorial) অবস্থিত সেখানে এক সময় জেলখানা ছিল? জায়গাটির নাম ছিল হরিণবাড়ি। নবাব সিরাজ উদ দউলা এখানে হরিণ শিকার করতে আসতেন। পশ্চিম বঙ্গের তাজমহল নামে পরিচিত এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৯০৬ সালে। শেষ হ্যেছিল১৯২১ সালে। তখন ভারতে ব্রিটিশ রাজত্ব চলছে। বড়লাট ছিলেন লর্ড কার্জন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়া মারা যাওয়ার পর তাঁর স্মৃতিসৌধ হিসেবে এই সৌধ নির্মিত হয়।এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর বহু অজানা কাহিনী নিয়েই আজকের এই আলোচনা।
১৭৭২ থেকে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এখনকার কলকাতা ছিল সেই সময়ের ব্রিটিশ শাসিত ভারতের রাজধানী। ১৭৬৭ সালে কলকাতায় দুটি মাত্র জেলখানা ছিল। একটি ছিল লাল বাজারে এবং অপরটি বড়বাজারে। একটি ছিল লঘু অপরাধের জন্য এবং অপরটি ছিল ঘৃণ্য অপরাধের জন্য। তখন ইংরেজ শাসকরা যে হারে যথেচ্ছ ধরপাকড় করত তাতে জেলে আর আসামি রাখার জায়গা হচ্ছিল না। তখন প্রেসিডেন্সি জেল তৈরি করা হয় ঠিক সেখানে , যেখানে এখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। এই জেলটি উচ্চ শ্রেণির কয়েদী দের জন্য ব্যবহার করা হত। এমনকি এই জেলে কয়েদীদের সাথে তাদের পরিবারের লোকের ও থাকার বন্দোবস্ত ছিল। এই জেলের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একজন কয়েদী ছিলেন বেঙ্গল গেজেট পত্রিকার সম্পাদক জেমস অগাস্টাস হিকি.১৯০৬ সালে এই জেলটি স্থানান্তরিত হয়ে আলিপুরে চলে যায়। এবং এই জেল ভেঙ্গে রানির স্মৃতি সৌধ নির্মাণের জায়গা করা হয়।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে রানি ভিক্টোরিয়া মারা যাবার পর ঠিক হয় সারা ভারতজুড়ে রানির স্মৃতি রক্ষার্থে ছোট ছোট সৌধ নির্মাণ করা হবে।কিন্তু তৎকালীন ভাইসরই লর্ড কার্জন ঠিক করেন কলকাতার বুকে একটি সুবিশাল স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করবেন যা হার মানাবে তাজমহলের ঔজ্জ্বল্য আর স্থাপত্য শৈলীকে। এজন্য রাজস্থান থেকে নিয়ে আশা হয় মাকরানা মারবেল, যে মার্বেল তাজমহল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল। মেমোরিয়াল এর নক্সা মুঘল, ভেনিসিয়, মিশরীয়, দেকানি,এবং ইসলামী শৈলী থেকে গৃহীত হয়েছে।
স্থাপত্যটি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মারটিন এন্ড কোম্পানির উপর। মুখ্য স্থপতি ছিলেন উইলিয়াম এমারসন। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এমারসন কে বলা হয় ইতালিয়ান রেনেসাঁর স্থাপত্য শৈলীতে এটি নির্মাণ করতে কিন্তু এমারসন শুধু ইওরপের স্থাপত্যের মত মেমোরিয়ালটি গড়তে তীব্র আপ্ততি জানান। তিনি কৌশলে কাজের মধ্যে মুঘল ছাপ যুক্ত করেন। যে কারনেই এটি দেখতে অনেকটা তাজমহলের মত। সৌধকে ঘিরে একটি বিশাল বাগান ও তৈরি হয়। এই বাগানের নক্সা করেছিলেন লর্ড রেডেসডেল এবং জন প্রেইন।
এই স্মৃতি সৌধটির সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন অংশটি হল এই স্থাপত্যের ঠিক মাঝখানে একটি ডোম বা গম্বুজ। এই ডোমটির ঠিক নীচের ঘরটিকে বলা হয় কুইন্স হল। আর এই ডোমটির ঠিক ওপরেই বসানো রয়েছে একটি ব্রোঞ্জের পরী। রানীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গুলি ১২ টি চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তলা হয়েছে। কুইনস হলের উপরের গম্বুজের ১২ টি খোপে রয়েছে এই অনবদ্য দ্বাদশ চিত্রকলা। এই চিত্রগুলিতে শুধু যে রানীর জীবনের কথা তুলে ধরা হয়েছে তাই নয়, এখানে ধরা পড়েছে সেই সময়ের রাজকীয় জীবনযাত্রা, সামরিক বা রাজকর্মচারীদের পোশাক পরিচ্ছদ এবং সর্বোপরি সেকালের স্থাপত্য। ফলে কলকাতার তাজমহল এই মেমোরিয়াল হলে এলে আপনাকে একবার চোখ ফেরাতেই হবে ওপরের দিকে।
স্মৃতি সৌধ টিকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে বিশাল এক উদ্যান। প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে এবং নির্মল হাওয়া খেতে কলকাতা বাসী সকালে ও বিকেলে এখানে ছুটে আসেন।সবচেয়ে বেশী ভীর দেখা যায় প্রাত ভ্রমনের সময়।
বাগানের প্রবেশ মুল্য-
মাথাপিছু- ২০ টাকা
মাসিক টিকিট মাথা পিছু- ১০০ টাকা
বার্ষিক টিকিট মাথা পিছু- সিনিওর সিটিজেন হলে -১০০০ না হলে ২০০০
বাগান খোলা থাকে সকাল ৫.৩০ থেকে সন্ধ্যে ৬ টা পর্যন্ত
ভবনের প্রবেশ মুল্য-
ভারতীয় হলে- ৩০ টাকা
বিদেশী হলে- ১০০ টাকা (সার্ক ভুক্ত দেশ) এবং ৫০০( সার্ক ভুক্ত ছাড়া অন্য কোন দেশ)
মিউজিয়ামটি সোমবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিনই খোলা থাকে। সময় সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। এছাড়া বিশেষ ছুটির দিন গুলিতে বন্ধ থাকে।
সন্ধ্যে বেলা এখানে আলোক ও ধবনি প্রদর্শনী হয়। এর জন্য আলাদা করে টিকিট কাটতে হয়। এই প্রদর্শনী আয়জিত হয় সন্ধ্যে ৬ টা থেকে রাত ৮.৩০ এর মধ্যে।
শীতকালে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এখানে ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময়।
আপনি ঘরে বসে অনলাইনেও টিকিট কাটতে পারেন বিস্তারিত জানতে মেমোরিয়াল এর নিজস্ব ওয়েব সাইট এ দেখে নিন- www.victoriamemorial-cal.org/
১৭৭২ থেকে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এখনকার কলকাতা ছিল সেই সময়ের ব্রিটিশ শাসিত ভারতের রাজধানী। ১৭৬৭ সালে কলকাতায় দুটি মাত্র জেলখানা ছিল। একটি ছিল লাল বাজারে এবং অপরটি বড়বাজারে। একটি ছিল লঘু অপরাধের জন্য এবং অপরটি ছিল ঘৃণ্য অপরাধের জন্য। তখন ইংরেজ শাসকরা যে হারে যথেচ্ছ ধরপাকড় করত তাতে জেলে আর আসামি রাখার জায়গা হচ্ছিল না। তখন প্রেসিডেন্সি জেল তৈরি করা হয় ঠিক সেখানে , যেখানে এখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। এই জেলটি উচ্চ শ্রেণির কয়েদী দের জন্য ব্যবহার করা হত। এমনকি এই জেলে কয়েদীদের সাথে তাদের পরিবারের লোকের ও থাকার বন্দোবস্ত ছিল। এই জেলের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একজন কয়েদী ছিলেন বেঙ্গল গেজেট পত্রিকার সম্পাদক জেমস অগাস্টাস হিকি.১৯০৬ সালে এই জেলটি স্থানান্তরিত হয়ে আলিপুরে চলে যায়। এবং এই জেল ভেঙ্গে রানির স্মৃতি সৌধ নির্মাণের জায়গা করা হয়।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে রানি ভিক্টোরিয়া মারা যাবার পর ঠিক হয় সারা ভারতজুড়ে রানির স্মৃতি রক্ষার্থে ছোট ছোট সৌধ নির্মাণ করা হবে।কিন্তু তৎকালীন ভাইসরই লর্ড কার্জন ঠিক করেন কলকাতার বুকে একটি সুবিশাল স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করবেন যা হার মানাবে তাজমহলের ঔজ্জ্বল্য আর স্থাপত্য শৈলীকে। এজন্য রাজস্থান থেকে নিয়ে আশা হয় মাকরানা মারবেল, যে মার্বেল তাজমহল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল। মেমোরিয়াল এর নক্সা মুঘল, ভেনিসিয়, মিশরীয়, দেকানি,এবং ইসলামী শৈলী থেকে গৃহীত হয়েছে।
স্থাপত্যটি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মারটিন এন্ড কোম্পানির উপর। মুখ্য স্থপতি ছিলেন উইলিয়াম এমারসন। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এমারসন কে বলা হয় ইতালিয়ান রেনেসাঁর স্থাপত্য শৈলীতে এটি নির্মাণ করতে কিন্তু এমারসন শুধু ইওরপের স্থাপত্যের মত মেমোরিয়ালটি গড়তে তীব্র আপ্ততি জানান। তিনি কৌশলে কাজের মধ্যে মুঘল ছাপ যুক্ত করেন। যে কারনেই এটি দেখতে অনেকটা তাজমহলের মত। সৌধকে ঘিরে একটি বিশাল বাগান ও তৈরি হয়। এই বাগানের নক্সা করেছিলেন লর্ড রেডেসডেল এবং জন প্রেইন।
এই স্মৃতি সৌধটির সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন অংশটি হল এই স্থাপত্যের ঠিক মাঝখানে একটি ডোম বা গম্বুজ। এই ডোমটির ঠিক নীচের ঘরটিকে বলা হয় কুইন্স হল। আর এই ডোমটির ঠিক ওপরেই বসানো রয়েছে একটি ব্রোঞ্জের পরী। রানীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গুলি ১২ টি চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তলা হয়েছে। কুইনস হলের উপরের গম্বুজের ১২ টি খোপে রয়েছে এই অনবদ্য দ্বাদশ চিত্রকলা। এই চিত্রগুলিতে শুধু যে রানীর জীবনের কথা তুলে ধরা হয়েছে তাই নয়, এখানে ধরা পড়েছে সেই সময়ের রাজকীয় জীবনযাত্রা, সামরিক বা রাজকর্মচারীদের পোশাক পরিচ্ছদ এবং সর্বোপরি সেকালের স্থাপত্য। ফলে কলকাতার তাজমহল এই মেমোরিয়াল হলে এলে আপনাকে একবার চোখ ফেরাতেই হবে ওপরের দিকে।
স্মৃতি সৌধ টিকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে বিশাল এক উদ্যান। প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে এবং নির্মল হাওয়া খেতে কলকাতা বাসী সকালে ও বিকেলে এখানে ছুটে আসেন।সবচেয়ে বেশী ভীর দেখা যায় প্রাত ভ্রমনের সময়।
বাগানের প্রবেশ মুল্য-
মাথাপিছু- ২০ টাকা
মাসিক টিকিট মাথা পিছু- ১০০ টাকা
বার্ষিক টিকিট মাথা পিছু- সিনিওর সিটিজেন হলে -১০০০ না হলে ২০০০
বাগান খোলা থাকে সকাল ৫.৩০ থেকে সন্ধ্যে ৬ টা পর্যন্ত
ভবনের প্রবেশ মুল্য-
ভারতীয় হলে- ৩০ টাকা
বিদেশী হলে- ১০০ টাকা (সার্ক ভুক্ত দেশ) এবং ৫০০( সার্ক ভুক্ত ছাড়া অন্য কোন দেশ)
মিউজিয়ামটি সোমবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিনই খোলা থাকে। সময় সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। এছাড়া বিশেষ ছুটির দিন গুলিতে বন্ধ থাকে।
সন্ধ্যে বেলা এখানে আলোক ও ধবনি প্রদর্শনী হয়। এর জন্য আলাদা করে টিকিট কাটতে হয়। এই প্রদর্শনী আয়জিত হয় সন্ধ্যে ৬ টা থেকে রাত ৮.৩০ এর মধ্যে।
শীতকালে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এখানে ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময়।
আপনি ঘরে বসে অনলাইনেও টিকিট কাটতে পারেন বিস্তারিত জানতে মেমোরিয়াল এর নিজস্ব ওয়েব সাইট এ দেখে নিন- www.victoriamemorial-cal.org/
0 Comments