প্রবাদ বা শোলক রসিক মনের রসানুভুতির সঙ্গে অন্বিত এবং রূপকের মহিমায় দৈনন্দিন জীবন অভিজ্ঞতার রসে জারিত। প্রবাদ স্বতঃই স্থানীয় বিশ্বাস অবিশ্বাস রীতি- নীতি প্রথা- প্রকরণ ও সমাজ সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে চলে। লোক সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মতই প্রবাদের যথার্থ সংজ্ঞা নির্দেশ করা অত্যন্ত দুরূহ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পণ্ডিতগণ প্রবাদের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন সেগুলো প্রবাদের পূর্ণ পরিচয়বাহী হয়েছে কিনা তা নিয়ে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় প্রবাদ হল বিশেষ বিশেষ জীবন অভিজ্ঞতার সরস ব্যঞ্জনাময় কাব্যিক অভিব্যক্তি।
এক একটি অঞ্চলের ভাষা , রূপক ও শব্দ চয়ন সেই স্থানের ভু প্রকৃতি, ইতিহাস ও জীবন- জীবিকার উপরে নির্ভর করে কিছু না কিছু স্বাতন্ত্র্য গ্রহণ করে।
কিছু আঞ্চলিক প্রবাদ প্রবচন-
১। কুড়া খেয়ে মরল বাপ।
তার ব্যাটাই বিদ্যাপ।।(দরিদ্রের প্রতি অভিজাতদের বিদ্রুপ। যে সংসারের পিতা কঠোর শ্রমের বিনিময়েও আহারের প্রয়োজনীয় চাল সংগ্রহ করতে না পেরে গোখাদ্য কুঁড়ো খেয়ে জীবন কাটিয়ে গেল, তারই ছেলে সেই আবহমানতা কে উপেক্ষা করে সামান্য বিদ্যা অর্জন করে মোড়লি করবে এটা অসম্ভব )
২। ঘরে নাই ভুজল- ভাঙ
ব্যাটার নাম দুর্গারাম।।
( যে নিঃস্ব রিক্ত সর্বহারা , তার ছেলের গালভরা নাম রাখা হয়েছে)
৩। পরের ধনে পরধনী ।
সুকা বিকা মহাজনী।।
( বড় মহাজনের কাছ থেকে শুটকি মাছ ধারে নিয়ে ব্যবসা করে। আবার বড় লোকের মত বড়াই করে )
আরও পড়ুন
শুদ্ধ বানান লিখুন click here
৪। বুড়া হিলি থুরা হিলি তীর্থে দিলি মন।
টকামেনে দেখাইবে কাহিছে গোলক বৃন্দাবন।।
( ভারত বর্ষের সনাতন ঐতিহ্য - মা বাবা শত অভাব অনটনের মধ্যেও সন্তান দের মানুষ করেন বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তার প্রয়োজনে। কিন্তু বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন করে পুত্র আমোদ প্রমোদে ব্যস্ত। টকামেনে= পুত্রগণ)
৫। কুলক্ষনি বউ মোর কোথা দিল পা।
আগে খাইলা শাশু শশুরা পরে খাইলা জা।।
( বিবাহের পরে শ্বশুর, শাশুড়ি, এবং জা মারা গেছে। দোষ বউ এর)
৬। বাপের কালে নাই দুলি।
আজ দিচ্ছে পা তুলি।।
( আরাম প্রিয় বউ। বাপের জন্মে জা পায়নি, আজ তাই চাইছে )
৭। গতরের নাম আদরমণি।
গতর নাইত পচা পাণি।।
৮। সাবুন মাখা গা, আলতা পরা পা।
বর্ষা দিনে কী খাবুরে গরম গরম চা।।
৯। সেদিন সেকাল নাইরে বামলি।
তলে ভাত উপরে আমলি।।
১০। যার কাপড় তার জাড়।
নি- কাপড়ার পাথর আড়।।
0 Comments