কীভাবে হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ


ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'আম্ফান'(Amphan) । তিন দশকের মধ্যে এত বড় ঘূর্ণিঝড় হয়নি বঙ্গোপসাগর উপকূলে।বাংলাতে এতবড় ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসেনি সুদূর অতীতে। এবার সুপার সাইক্লোন আম্ফানের অভিমুখ সরাসরি বাংলার দিকে। এই পরিস্থিতিতে ফিরে ফিরে আসছে পুরনো সব ঝড়ের স্মৃতি।

'আম্ফান' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ দৃঢ়তা, স্বাধীন চিত্ত, শক্তি, ইত্যাদি। এই অর্থ কতটা মিলবে আসন্ন এই ঝড়ের সঙ্গে, তা শিগগিরই জানতে পারব আমরা। কিছুকাল আগের এক মারাত্মক ঝড়ের নাম ছিল ‘বুলবুল’। আম্ফানের পরে যে ঝড় আসবে তার নাম 'নিসর্গ'। আম্ফান বিগত তিন দশকের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ঘূর্ণি ঝড় গুলির এই নামকরণ কীভাবে হয় জানেন? 
পৃথিবীর যে কোনও মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাইক্লোনের নামকরণ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ছ’টি আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্র (regional specialised meteorological centres বা RSMC), যার মধ্যেই পড়ে IMD (India Meteorological Department) বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগর সমেত ভারত মহাসাগরের উত্তরভাগে যেসব সাইক্লোন দেখা দেয়, সেগুলির নামকরণ করে আইএমডি। এই অঞ্চলের ১২টি দেশকে সাইক্লোন বা অন্যান্য ঝড়ের আগমনবার্তা এবং সে সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার দায়ভার ন্যস্ত হয়েছে আইএমডি-র উপর।এর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। আজ থেকে দুই দশক আগে ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিকাল অর্গানাইজেশন (WMO) এবং এসক্যাপ (United Nations Economic and Social Commission for Asia and the Pacific বা ESCAP)-এর অধীনস্থ আটটি দেশ – ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, এবং থাইল্যান্ড – সিদ্ধান্ত নেয় যে এই অঞ্চলের সাইক্লোনের নামকরণ করবে তারা। প্রতিটি দেশ তাদের নামের তালিকা পাঠানোর পর তা চূড়ান্ত করে একটি WMO/ESCAP প্যানেল, যার পোশাকি নাম প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস (PTC)। ২০১৮ সালে WMO/ESCAP দলে প্রবেশ করে আরও পাঁচটি দেশ – ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইয়েমেন।
সাইক্লোনের নামকরণ জরুরি কেন? কী প্রক্রিয়া তার?

নম্বর বা পরিভাষা ব্যবহার করার বদলে সাইক্লোনের নাম রাখলে শুধু যে জনসাধারণ সহজে মনে রাখতে পারে তাই নয়, সাহায্য হয় বিজ্ঞানী, মিডিয়া, বিপর্যয় মোকাবিলা দল প্রভৃতিরও। নির্দিষ্ট নাম ব্যবহার করলে সাইক্লোনের বর্তমান অবস্থান এবং তীব্রতা নির্ধারণ, দ্রুত সতর্কীকরণ, এবং একই অঞ্চলে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি দূরীকরণের কাজে সুবিধা হয়।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে যে নিয়মগুলি মেনে চলতে হয়:

* প্রস্তাবিত নামগুলি রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি, ধর্মীয় ভাবনা, বিশেষ সংস্কৃতি, অথবা লিঙ্গ নিরপেক্ষ হবে
* এমনভাবে নাম বাছতে হবে যাতে পৃথিবীর কোনও জনগোষ্ঠী বা সমষ্টির ভাবনায় আঘাত না লাগে
* নামের মধ্যে রুক্ষতা বা নির্মমতা প্রকাশ পেলে চলবে না
* নাম হবে সংক্ষিপ্ত, সহজে উচ্চারণ করা যায় এমন, এবং সকল সদস্য দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য
* নামের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য আট অক্ষরের বেশি হবে না
* প্রস্তাবিত নামের সঙ্গে উচ্চারণ নির্দেশিকা এবং ভয়েস ওভার দিতে হবে
* ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামের পুনরাবৃত্তি হবে না। একবার ব্যবহার করলে আর ব্যবহার করা যাবে না।
গতমাসে ১৬৯টি নামের একটি তালিকা প্রকাশ করে আইএমডি  ১৩টি দেশ থেকে ১৩টি করে নাম। নতুন তালিকায় ঢোকানো হয় পূর্ববর্তী তালিকার একটিমাত্র নাম  আম্ফান  কারণ নতুন তালিকা প্রকাশের সময় পর্যন্ত অব্যবহৃত ছিল তা। দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগর সংলগ্ন এলাকায় ঘনীভূত হতে থাকা এই ঘূর্ণিঝড় আম্ফান  এর জন্যই বর্তমানে সতর্কবার্তা জারি করেছে আইএমডি।
 আম্ফানের আগে যে ঝড় গুলি হয়েছে। 


আম্ফানের পর যে ঝড় গুলি আসবে তার তালিকা নীচের ২টি টেবিলে। 
ভারত কোন কোন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে?
ভারত যে ১৩টি নাম পাঠিয়েছে, সেগুলি হলো: গতি, তেজ, মুরাসু, আগ, ব্যোম, ঝড়, প্রবাহ, নীর, প্রভঞ্জন, ঘূর্ণি, অম্বুদ, জলধি, এবং বেগ
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ জরুরি কেন? 
নম্বর বা পরিভাষা ব্যবহার করার বদলে ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখলে শুধু যে জনসাধারণ সহজে মনে রাখতে পারে তাই নয়,এর ফলে সাহায্য হয় বিজ্ঞানী, মিডিয়া, বিপর্যয় মোকাবিলা দল প্রভৃতিরও। নির্দিষ্ট নাম ব্যবহার করলে ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান অবস্থান এবং তীব্রতা নির্ধারণ, দ্রুত সতর্কীকরণ, এবং একই অঞ্চলে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি দূরীকরণের কাজে সুবিধা হয়।
#YAAS


Post a Comment

1 Comments