#Tarapith
তারাপীঠ(Tarapith) সতীপীঠ না সিদ্ধপীঠ তা নিয়ে দুরকম কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। তারাপীঠের অজানা কাহিনী নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন। চলুন জেনে নিই তারাপীঠ আসলে শক্তিপীঠ না সিদ্ধপীঠ।
বীরভূম জেলার আরও অনেক অজানা তথ্য জানতে ভিডিওটি দেখুন।
তারাপীঠের মা তারা |
পশ্চিম বঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাট শহরের কাছে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র মন্দির নগরী হল তারাপীঠ। অতীতে নাম ছিল তারাপুর বা চন্ডীপুর। এটি শক্তিপীঠ না সিদ্ধপীঠ তা নিয়ে দুরকম মত পাওয়া যায়।তারাপীঠ মন্দিরের উৎস ও তীর্থ মাহাত্ম নিয়ে একাধিক কিংবদন্তি লোকমুখে প্রচারিত হয়ে থাকে।
কেন শক্তিপীঠ?
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে শিবের স্ত্রী সতী তার পিতা দক্ষের “শিবহীন” যজ্ঞ সম্পাদনার ঘটনায় অপমানিত বোধ করেন। স্বামী নিন্দা সহ্য করতে না পেরে তিনি যজ্ঞ স্থলেই আত্মাহুতি দেন। এই ঘটনায় শিব ক্রুদ্ধ হয়ে সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু ক্রেন।তখন বিষ্ণু শিবের ক্রোধ শান্ত করতে সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহ খণ্ড বিখন্ড করে দেন। সতীর দেহ একান্নটি খন্ডে ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর নানা স্থানে পতিত হয়। এই সকল স্থান “শক্তিপীঠ” নামে প্রসিদ্ধ হয়। কিংবদন্তি অনুসারে সতীর তৃতীয় নয়ন বা নয়ন তারা তারাপুর বা চণ্ডীপুর যা বর্তমানে তারাপীঠ গ্রামে পড়ে এবং প্রস্তরীভূত হয়ে যায়।
কেন সিদ্ধপীঠ?
অপর একটি কিংবদন্তি অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের সময় উত্থিত হলাহল বিষ পান করার পর বিষের জ্বালায় শিবের কণ্ঠ জ্বলতে শুরু করে। এই সময় তারাদেবী শিবকে আপন স্তন্য পান করিয়ে তাঁর জ্বালা নিবারণ করেন।এই তারা হলেন মাতৃ রূপী তারা যা পরবর্তী কালে বৌদ্ধ দেবী মহাচিন তারা এবং তাই আবার হিন্দুদের উগ্রতারা রূপে পরিচিত হয়েছে। শোনা যায় তিব্বত নেপাল অঞ্চল তথা ভোটদেশে গিয়ে বশিষ্ঠ নামে এক সন্ন্যাসী তারা সাধনার শিক্ষা নিয়ে ফিরে এসে তারাপীঠ মহাশ্মশানে শ্বেত-শিমূলের তলায় পঞ্চ মুন্ডির আসনে বসে (শিয়াল- সাপ- কুকুর- ষাঁড়- মানুষ) চিনাচার মতে মদ মাংস সহযোগে ত্নত্র সাধনা করেই নাকি তিনি সিদ্ধিলাভ করেন এবং প্রস্তরময় মাতৃ মূর্তি লাভ করেন। সেই মূর্তিতে মহাকাল রূপী মহাদেব মাতৃ রূপী তারাদেবীর কোলে শুয়ে মাতৃ স্তন্য পান করে চলেছেন। এই বশিষ্ঠ অবশ্য রঘুকুল গুরু বশিষ্ঠ নন। “হুগলী ও হাওড়ার ইতিহাস” গ্রন্থের লেখক বিধুভূষণ ভট্টাচার্য এই বশিষ্ঠকে আদিশুরের সময়ে কনৌজ থেকে আসা বেদগর্ভ বা পরাশরের পুত্র বলে উল্লেখ করেছেন। বেদগর্ভ কোপাই নদীর কূলে কঙ্কালিতলায় তন্ত্র সাধনা করেছিলেন।
সাধক গণ
বশিষ্ঠের পর বিশে ক্ষ্যাপা, আনন্দ নাথ, মোক্ষদানন্দ, কৈলাসপতি, বামাক্ষ্যাপা, নগেনকাকা, তাপাক্ষ্যাপা, নিগমানন্দ, শঙ্করবাবা, প্রভৃতি সাধকের সাধনপীঠ হিসেবে খ্যাতি এসেছে তারাপীঠের।
![]() |
বামা ক্ষ্যাপা |
তারা সাধনার সময়ক্রম
কোন সময়ে তারা সাধনার ধারা তারাপীঠে এসেছিল তার সঠিক দিনক্ষণ পাওয়া যায়না। তবে সম্ভবত সপ্তম শতাব্দীতেই আয নাগারজুন পুনপ্রচলন করে ছিলেন তারা সাধনার। সেই সময়ই হর্ষবর্ধন কামরূপের ভাস্কর বর্মণ বাংলার শশাঙ্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এই সুযোগে তিব্বতের রাজা স্রং স্যাং গাম্প আসাম ও নেপাল দখল করেন। এই সময়েই তিব্বত ও আসামের সঙ্গে গৌড়- রাঢ তথা বাংলার সাংস্কৃতিক বিক্ষোভ ঘটে। এর ফলে জন্ম লাভ করে তান্ত্রিক আচার অনুষ্ঠান। গোঁড়া পত্তন হয় তারা সাধনার। সম্ভবত সেই সপ্তম- অষ্টম শতাব্দীতেই তারাপুরে তথা তারাপীঠে তারা সাধনার সূচনা হয়। পরে হিন্দু তারা সাধনার যুগে সিদ্ধ- নাগারজুনের তারা আনয়নের কাহিনী বর্জন করে বশিষ্ঠের কাহিনী যুক্ত করা হয়েছে।
তারা মায়ের প্রথম মন্দির নির্মাণ করেন- রতনগড়ের শাক্ত বনিক জয় দত্ত
দ্বারকা নদীর বন্যায় সেই মন্দির ধ্বংস হওয়ার পর নির্মাণ করেন- ঢেকার রাজা রামজীবন রায়
আবারও দ্বারকা নদীর বন্যায় সেই মন্দির ধ্বংস হওয়ার তৈরি করেন মল্লার পুরের ব্যবসায়ী জগন্নাথ রায়।
১৬৯২ খ্রিস্টাব্দে নাটোরের রানি অন্নদা সুন্দরী বীরভূম অধিপতি আশাদুল্লার সঙ্গে রাজত্ব বিনিময় করে তারাপীঠ এলাকাটি নিজের আয়তে আনেন এবং মন্দিরটি সংস্কার করেন। সম্ভবত এই রানির উদ্যগেই তারাপীঠে নিত্য ভোগ ও নিত্য পুজর বন্দবস্ত হয় এবং তিনি সেবাইত প্রবর্তন করেন।
দর্শনীয় এলাকা
তারপীঠে মুল মন্দির ছাড়াও মুণ্ডমালিনী তলা, সন্তান সঙ্ঘের কালিতলা, জয় দত্তের স্মৃতি মন্দির, বাম দেবের মন্দির, আনন্দময়ি আশ্রম, শঙ্কর বাবার জন্মস্থান, বামা ক্ষ্যাপার জন্মস্থান,নিত্যানন্দের জন্মস্থান, স্বামী হংসানন্দ এর রামকৃষ্ণ আশ্রম, উদয় পুরের কালি প্রভৃতি।
পাথর চাপুরির দাতা বাবার মেলা 👈বীরভূম জেলার আরও অনেক অজানা তথ্য জানতে ভিডিওটি দেখুন।
0 Comments