বাঙালি যেমন ঘুরতে ভালবাসে তেমন খেতেও। আর ঘুরতে যাওয়া বিশেষ জায়গায় যদি বিশেষ কোন খাবার বিখ্যাত হয় তাহলে ত কথায় নেই। এই যেমন বর্ধমানের সীতাভোগ- মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, জয়নগরের মোয়া, তেমনই ক্ষীরপাইয়ের বাবরশা মিষ্টি। লক ডাউনে দীর্ঘদিন ঘর বন্দী থাকার পর সুযোগ পেয়ে ঘুরে এলাম ক্ষীরপাই, গরবেতা, গনগনি, জয়পুর জঙ্গল, বীর সিংহ গ্রাম - যে গ্রামে জন্মেছিলেন বিদ্যাসাগর। উঠেছিলাম ক্ষীরপাইয়ের এক বন্ধুর বাড়িতে। আশে পাশে ঘোরার পাশাপাশি ক্ষীরপাইয়ে বেশ কিছু জায়গার সন্ধান পেলাম। তার মধ্যে দীনময়ী দেবীর বাপের বাড়ি। সোজা কথায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শ্বশুর বাড়ি। একটি বিখ্যাত কালি মন্দির, নীলকুঠীর ধ্বংসাবশেষ।
এই সব জায়গা ঘুরতে ঘুরতে সন্ধান পেলাম ক্ষীরপাইয়ের বাবরশা মিষ্টির। মিষ্টি খেতে দোকানে ঢুকেই আগ্রহি হয়ে পরলাম এর ইতিহাস জানতে। জানা গেল ১৭৪০-৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বর্গিরা এখানে আক্রমন করেছিল একাধিকবার। বর্গিদের আক্রমনের ভয়ে এখানকার বাসিন্দারা এলাকা ছাড়তে শুরু করে। সেই সময় এডওয়ার্ড বাবরশ নামে এক সাহেব বর্গিদের হটিয়ে দেন। শহরের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। এই ঘটনার পর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ স্থানীয় এক মিষ্টি ব্যবসায়ি বাবরশা নামে একটি খাবার তৈরি করে এডওয়ার্ড সাহেবকে উপহার দেন।
আরেকটি ঘটনার কথাও লোক মুখে প্রচলিত আছে। কেউ কেউ মনে করেন এই মিষ্টির উৎপত্তি আরও অনেক আগে। একবার মুঘল সম্রাট বাবরকে নাকি এই মিষ্টি পাঠানো হয়েছিল। তাই থেকে এই নামকরণ।
যাইহোক এই সব কাহিনি শুনতে শুনতে ২ পিস ততক্ষণে পেটে চলে গেছে। এটা মিষ্টি হলেও মিষ্টি নয়। মিষ্টির রস মিশিয়ে খেতে হয়। আগে মধু দিয়ে খাওয়া হত। মুলত ময়দা, দুধ, ঘি দিয়ে তৈরি হয় বাবরশা। ছাঁচে ফেলে ভাজা হয় এই মিষ্টি। দাম ৭ টাকা ডালডা ভাজা হলে। গাওয়া ঘিয়ে ভাজা হলে ৯ থেকে ১০ টাকা।
দীনময়ী দেবীর পৈতৃক ভিটে তথা বিদ্যাসাগরের শ্বশুরবাড়ি। আরও পড়ুন- বেলিয়াতরের ম্যাচা সন্দেশ 👈 Vidyasagar👈Click |
0 Comments