চৌঘুরিয়া মোল্লা বাড়ির অজানা কাহিনী।

চৌঘুরিয়া মোল্লা বাড়ির অজানা ইতিহাস। 

মানস কুমার রায় 
চৌঘুরিয়া মোল্লা বাড়ি

চৌঘুরিয়া মোল্লা বাড়ি বাংলার প্রাচীনতম মুসলমান পরিবারের অন্যতম। পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার অন্তর্গত বুলবুলি তলার নিকট এই গ্রমাটি অবস্থিত। গ্রামের নামকরণ সম্পর্কে একটি কাহিনী লোকমুখে প্রচলিত আছে । শোনা যায় এই বাড়ির যিনি প্রতিষ্ঠাতা সেই সৈয়দ হামজা অনেক জায়গা ঘুরে এখানে বসতি স্থাপন করেন সেই থেকে এই গ্রামের নাম চৌঘুরিয়া। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভল্লুকা নদী। এক সময় এই নদী নৌ চলাচলের উপযোগী ছিল।

ভল্লুকা নদী

চৌঘুরিয়া মোল্লা বাড়ির যে সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে তা বিভিন্ন ঐতিহাসিক সুত্র এবং এই পরিবারের একজন সদস্য সৈয়দ হাসানুল হক এর লেখা থেকে জানা যায়। সৈয়দ হাসানুল হক লিখেছেন এই পরিবার হজরত মহম্মদের বংশধর। দিল্লির সুলতান ইলতুমিসের আমলে সুদুর পারস্য থেকে সৈয়দ সাহাবুদ্দিন এবং তার ভাই সৈয়দ সামসুদ্দিন ভাগ্য সন্ধানে দিল্লি আসেন। সামসুদ্দিন এর দিল্লিতে মৃত্যু হয়। সৈয়দ সাহাবুদ্দিন এর বংশধর সৈয়দ হামজা চৌঘুরিয়া মোল্লা বাড়ির নির্মাতা। সৈয়দ হামজা ও তার পরিবার প্রথমে ফৌজদার এবং পরে জমিদারি লাভ করেন। এই পরিবারের জমিদারি সম্পর্কে বেশ কিছু প্রচলিত জনশ্রুতি শোনা যায়। কোন এক সময় নবাব সরকারের খাজনা বাকী পড়ার দরুন এদের কয়েকজঙ্কে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে তেল না পেয়ে প্রস্বাব দিয়ে বাতি জালিয়েছিলেন। বাড়ি তৈরির সময় মিস্ত্রির ভুলে কাঠ ছোট কাটা পড়েছিল, পরে দোয়ার বরকতে কাঠ সঠিক মাপের হয়ে যায়।

এই পরিবারের একজন সদস্য সৈয়দ মহম্মদ মুসা দীর্ঘকাল মদিনায় ছিলেন। সেখানে বাড়ি করেছিলেন এবং নিজের দুই কন্যার বিবাহ সেখানে দেন। সেখানে তিনি ওয়াহাবি মতাবলম্বীর দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে গ্রামে ফিরে এসে কালনায় কাপড়ের দোকান করেন। চৌঘুরিয়া মোল্লা বাড়ির সদস্যরা সর্বত্র সম্মানিত হতেন। একবার নবদ্বীপে এক ধর্ম সভায় নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন সৈয়দ করম উল্লা। সেখানে চৌঘুরিয়া মোল্লাদের মোল্লা নাম নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন ওঠে সৈয়দরা আবার মোল্লা হল কীভাবে? এখানে মোল্লা পদবী যুক্ত লোকদের সামাজিক অবস্থান খুব উঁচুতে নয়। চৌঘুরিয়া মোল্লা বাড়ির সৈয়দ পদবী বংশানুক্রমিক আর মোল্লা খেতাব বাদশার দেওয়া। এই বংশের সৈয়দ আব্দুল হাকিম মোল্লা খেতাব পেয়েছিলেন। স্যার যদুনাথ সরকারের History of Bengal এ এই বিষয়টির উল্লেখ আছে । রমেশ চন্দ্র মজুমদারের Economic History of Bengal  গ্রন্থে Choughuria নামের উল্লেখ আছে।

চৌঘুরিয়া মোল্লা বাড়ি

১৮৫৭ র বিদ্রোহের পর মুসলমান জমিদাররা ব্রিটিশ সরকারের বিষ নজরে পড়ে। এই সময় চৌঘুরিয়া মোল্লা বাড়ি আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। সেই সময় ছৌঘুরিয়াতে যে ইসলাম শিক্ষার কেন্দ্র ছিল তা বন্ধ হয়ে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ম্যালেরিয়ার দাপট। একসময় এই গ্রামে ৩৩টি পাড়া ছিল এবং দুই বেলা হাট বসত। সেটা ক্রমশ জনবিরল হতে শুরু করে। শোনা যায় একটি কুল গাছকে কেন্দ্র করে চৌঘুরিয়ার তিন শরিকে মামলা শুরু হয় এবং চল্লিশ বছর সেই মামলা চলে।সেই সময় মোল্লারা গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করে।

এই বংশের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব-

·        সৈয়দ আবুল মনসুর হাবিবুল্লাহ- ইনি পশ্চিম বঙ্গ বিধান সভার স্পিকার এর পদ অলঙ্কৃত করেছেন।

·        মমতাজ সঙ্ঘমিতা- ইনি ভারতের লোকসভার সদস্য পদ অলঙ্কৃত করেন। ইনি সৈয়দ আবুল মনসুর হাবিবুল্লাহর কন্যা।

·        সৈয়দ শাহেদুল্লা(মটর)- ইনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বর্ধমান জেলার প্রথম সম্পাদক এর পদ অলঙ্কৃত করেন।

·        সৈয়দ শাহেদুল্লার দাদামশাই-  স্বদেশী আন্দোলনের বিশিস্ট নেতা।

       আরও পড়ুন- বর্ধমান এর অজানা কাহিনী 👈Click here

                     পুরুলিয়ার অজানা ইতিহাস 👈 Click here

                    পন্ডিতা রমাবাঈ স্মরনীয় কেন 👈 Click here

                    রাইটার্স বিল্ডিং এর অজানা কাহিনী 👈 Click here

                                    পাথরচাপুরির দাতা বাবার মেলা 👈 Click Here


 

 

Post a Comment

0 Comments